ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তীব্র উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক নজিরবিহীন মাত্রায় শোচনীয় হয়ে পড়েছে।

পশ্চিমা বিশ্বের প্রধান মোড়ল হিসেবে মার্কিন সরকার রাশিয়ার ওপর সবচেয়ে জোরালো নিষেধাজ্ঞা আরোপের দায়িত্ব নিয়েছে এবং রাশিয়াকে যত বেশি সম্ভব দুর্বল করতে চাইছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল (শনিবার) পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশোতে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না এবং এদেশের নেতা বা প্রধান হওয়া তার উচিত নয়। অবশ্য বাইডেনের এই বক্তব্যের কিছুক্ষণ পর হোয়াইট হাউজের একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ওয়ারশ’তে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে বক্তব্য দিয়েছেন তার অর্থ রাশিয়ার ক্ষমতায় পরিবর্তন আনা নয়। বরং তার বক্তব্যের অর্থ হল এটা যে প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর বা আশপাশের অঞ্চলে বলপ্রয়োগের সুযোগ পুতিনকে দেয়া উচিত নয়।

বাইডেনের ওই বক্তব্যের পর রাশিয়া ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছে, রাশিয়ার ক্ষমতায় কে থাকবেন বা থাকবেন না তা ঠিক করবে রুশ জনগণ। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রাশিয়ায় সরকার পরিবর্তনের দায়িত্ব বাইডেনের নয়, কেবল রুশ জনগণই এই দায়িত্ব পালনের অধিকার রাখে।

যদিও হোয়াইট হাউজ বাইডেনের বেফাঁস বক্তব্যের ব্যাপারে সাফাই দেয়ার চেষ্টা করেছে, তবুও এটা স্পষ্ট যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের মধ্যে ওয়াশিংটনের আসল ইচ্ছাই প্রকাশ হয়েছে। অন্য কথায় মার্কিন সরকার পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়।

কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রুশ-মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ-বিরোধী যেসব তৎপরতা শুরু করেছিলেন বাইডেন কেবল তা-ই অব্যাহত রাখেননি একইসঙ্গে তিনি ওবামার রাশিয়া-বিদ্বেষী নীতিকেও তীব্রতর করেছেন। ওবামা যা বাস্তবায়নে সক্ষম হননি বাইডেন তা আরও জোরালো মাত্রায় বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন।

বাইডেনের এ নীতির কারণ হল পুতিন রাশিয়ার জাতীয় শক্তি ও মর্যাদা আবারও পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন এবং পশ্চিম এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ ও ল্যাটিন আমেরিকা অঞ্চলসহ বিশ্বের নানা অঞ্চলে প্রকাশ্যেই মার্কিন পরিকল্পনাগুলো বানচালের চেষ্টা করছেন। পুতিন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং-কে সঙ্গে নিয়ে পাশ্চাত্যের একাধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে বিশ্বে বহুমেরুকেন্দ্রীক ক্ষমতা-বলয় সৃষ্টি এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে নানা সংকট সমাধানের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিয়েছেন।

মস্কো কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের দিক থেকে ওয়াশিংটনের সমকক্ষ হওয়ায় মার্কিন সরকারের নেতৃবৃন্দ সব সময়ই রাশিয়াকে মারাত্মক হুমকি বলে মনে করছেন। আর তাই তারা রাশিয়াকে যত বেশি সম্ভব দুর্বল ও খণ্ড-বিখণ্ড করার ওপর জোর দিচ্ছেন এবং রাশিয়ার পরমাণু হুমকির ক্ষমতাও বিলুপ্ত করতে চান। ইউক্রেন সংকট পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত বা দুর্বল করাসহ মার্কিন সরকারের লালিত রুশ-বিরোধী খায়েশগুলোকে বাস্তবায়ন করার মোক্ষম অজুহাত সৃষ্টি করেছে।

কিন্তু ওয়াশিংটনের এসব খায়েশ পূরণ অসম্ভব বা খুব দুঃসাধ্য হবে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কারণ পুতিন গত দুই দশকে রাশিয়ার উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এবং ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি রাশিয়ার বেশ জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবেই টিকে থাকবেন। এমনকি এর পরও তিনি রাশিয়ার নীতি-নির্ধারণে প্রধান ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে। #

পার্সটুডে